অনিকের বয়স এক বছর। দু'দিন ধরে দ্রুত শ্বাস। তার মা তাকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। এটি শিশু প্রাণঘাতী নিউমোনিয়ার অন্যতম লক্ষণ। আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর এক অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। আমাদের দেশে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের প্রায় দেড় লাখ শিশু প্রতি বছর এ রোগে মারা যায়। নিউমোনিয়া আমাদের শিশুদের জন্য এক মহাকাল। নিউমোনিয়া বলতে ফুসফুসের সংক্রমণকেই বুঝায়। ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস দ্বারা যখন ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটে তখন তাকে নিউমোনিয়া বলে। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর এক প্রধান কারণ এ মারাত্মক নিউমোনিয়া। প্রসবকালীন কম ওজনের বাচ্চা (জন্মকালীন ওজন আড়াই কেজির কম) মায়ের দুধ না খাওয়ানো, অপুষ্টি ৭টি রোগের প্রতিষেধক টিকা না দেয়া, ভিটামিন 'এ' এর ঘাটতি, ঠা-া/স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, ঘনবসতি ও দূষিত পরিবেশ। মূলত এগুলো নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। রোগের লক্ষণগুলো হলো_ শিশু ভালবাবে খাওয়া দাওয়া করে না, পানীয় গ্রহণে অপারগতা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক ঘুম। যা সহজে ভাঙে না। জ্বর বা স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা কমে যাওয়া। মারাত্মক পুষ্টিহীনতা, শ্বাস নেয়ার সময় বুকের নিচের অংশ ভিতরের দিকে দেবে যাওয়া। যাকে চেস্ট ইনড্রয়িং বলে।
এগুলো মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ। তা ছাড়া ০-২ মাস বয়সের শিশুর ক্ষেত্রে শান্ত অবস্থায় শ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৬০ বা তার চেয়ে বেশি হলে এবং শ্বাস নেয়ার সময় পাঁজরের নিচের অংশ মারাত্মকভাবে নিচের দিকে চেপে গেলে কালবিলম্ব না করে দ্রুত শিশুকে নিটকতম হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে। শিশুর বয়স অনুসারে প্রতি মিনিটে কতবার শ্বাস নেয় এবং ত্যাগ করে এ সংখ্যা দিয়েও আমরা শিশুর নিউমোনিয়ার গতি প্রকৃতি নির্ণয় করতে পারি যেমন_ জন্মের পর হতে ২ মাস পর্যন্ত তা হবে ৬০ বারের কম। ২ মাস পর হতে ১২ মাস পর্যন্ত হবে ৫০ বারের কম। ১২ মাস পর হতে ৫ বছর পর্যন্ত হবে ৪০ বারের কম। সঠিক চিকিৎসার জন্য নিউমোনিয়া রোগীকে বয়স অনুযায়ী শ্রেণী বিভাগ করা যায়। যেমন শিশুর বয়স ০-২ মাসে রয়েছে খুব মারাত্মক নিউমোনিয়া, মারাত্মক নিউমোনিয়া নয়। যেমন- সর্দি, কাশি, আবার শিশুর ২ মাস হতে ৫ বছর পর্যন্ত শ্রেণী বিন্যাসটি হলো এমন- খুব মারাত্মক নিউমোনিয়া, সাধারণ নিউমোনিয়া, নিউমোনিয়া নয় (সর্দি কাশি)। তাই দেখা যায় যে, ০-২ মাসের শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণ নিউমোনিয়া কথাটি নেই। কারণ ছোট শিশুরা সহজেই মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা না পেলে এরা মৃত্যুর শিকার হয়।
সাধারণ সর্দি কাশিতে কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই। বাড়িতে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই তা সেরে যায়। তাই সর্দি-কাশিও নিউমোনিয়ার মধ্যে লাক্ষণিক পার্থক্যগুলো বুঝতে পারলেই সঠিক ব্যবস্থা নেয়া যায়। এ রোগে সব বয়সী মানুষই আক্রান্ত হতে পারে। তবে ০-৫ বছরের শিশুরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী এ ঘাতক নিউমোনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি এবং মেলামেশার ফলে এক জনের কাছ থেকে অন্য জনে এ রোগ ছড়ায়। প্রাণঘাতী নিউমোয়িা প্রতিরোধে যা প্রয়োজন। সেগুলো হলো_ শিশুর জন্মের পর শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানো। ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুই বুকের দুধ এবং ছয় মাস পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত বাড়তি খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখা। আলো বাতাসপূর্ণ ঘরে শিশুকে রাখার ব্যবস্থা করা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিশু পালন, রান্নার ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখা। জন্মের পর থেকে এক বছরের মধ্যে সবগুলো রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা। সর্বোপরি জনগণের মাঝে আচরণগত পরিবর্তন ঘটানোসহ মায়েদের মাঝে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া। যাতে মায়েরা বাড়িতে শিশুর যত্নে আরও সচেষ্ট হতে পারেন।
No comments :
Post a Comment