Blogger Tricks

সফরে রোজা না রাখার অনুমতি

লিয়াকত আলী

মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ৭ তারিখ। আল্লাহতায়ালা এ মাসের রোজা প্রত্যেক সম মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ করেছেন। তবে এ থেকে সাময়িকভাবে হলেও ছাড় দেয়া হয়েছে রোগী ও মুসাফিরকে। অসুস্থতা যেমন সিয়াম পালন থেকে ছাড় পাওয়ার একটি কারণ, তেমনি আরেক কারণ সফর। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাস প্রত্য করবে, তাকে এতে রোজা রাখতে হবে। 
আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে সে অন্যান্য দিন থেকে এ সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে কর্মপদ্ধতি সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে পাওয়া গেছে, তার আলোকে আইম্মায়ে মুজতাহিদিন সালাত ও সিয়ামে ছাড় পাওয়ার শর্ত হিসেবে সফরের দূরত্ব ও মেয়াদ নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন। আসল উদ্দেশ্য, নামমাত্র ভ্রমণ ও প্রবাসজীবনকে যেন ইবাদতে বিশেষ সুবিধা লাভের কারণ হিসেবে কেউ ব্যবহার করতে না চায়, তা নিশ্চিত করা। এ জন্য উল্লেখযোগ্য দূরত্ব একটি শর্ত হিসেবে গণ্য। 
 
হেঁটে স্বাভাবিক গতিতে তিন দিনে যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করার রীতি তখনকার আরবে প্রচলিত ছিল, সেটাকে এ ব্যাপারে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই তিন দিনের পথ বা তিন মঞ্জিল পরবর্তীকালের পরিমাপে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সাব্যস্ত করা হয়। তা ছাড়া কুরআন মজিদের ‘আলা সফর’ শব্দ থেকে অনুমিত হয়, নিছক প্রবাসজীবন নয়, বরং চলমান অবস্থা শর্ত। তাই সফরকালে উল্লেখযোগ্য সময় বা কমপে ১৫ দিন যাত্রাবিরতির কারণে সালাতে কসর ও সিয়ামে ছাড়ের হুকুম রহিত হয়ে যায়। সফর কান্তিকর হওয়াই স্বাভাবিক। জাগতিক ক্রিয়াকলাপের প্রয়োজনে মানুষকে সফরে যেতেই হয়। তাই ইসলামি শরিয়তে মুমিন বান্দাদের জন্য সফরকালে সালাত ও সিয়াম আদায়ে কিছুটা সুবিধা দেয়া হয়েছে। যদি কারো সফর ব্যতিক্রমী হিসেবে আরামদায়ক হয়ও, তবুও তার জন্য এ সুবিধা রহিত হবে না। একজন তাবেয়ি এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন হজরত ওমর ফারুককে। জবাবে হজরত ওমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তুমি যেমন আমাকে প্রশ্ন করেছ, আমিও তেমনি আল্লাহর রাসূলকে এ প্রশ্ন করেছিলাম। বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেনÑ যখন তোমরা সফরে থাকবে, তখন তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে কাফেররা তোমাদের বিপদে ফেলবে, তাহলে নামাজে কসর করায় তোমাদের কোনো অন্যায় হবে না। এখন তো আমরা নিরাপদ হয়ে গেছি। জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এটা আল্লাহতায়ালার দান। এ দান তোমরা গ্রহণ করো। এ জন্য ইমাম আবু হানিফার মতে সফরে নামাজের কসর করা বাধ্যতামূলক। অবশ্য অন্য ইমামরা তা ঐচ্ছিক বলেছেন। কিন্তু সফরে রোজা রাখা না রাখা দু’টিরই অনুমতি আছে, এ ব্যাপারে সবাই একমত। কোনটি ভালো রাখা নাকি না রাখা সে সম্পর্কে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এক হাদিসে দেখা যায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সফরে রোজা রাখা খুব ভালো। কিন্তু আরেক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তির প্রোপট থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তা এই যে, এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জায়গায় লোকজনের ভিড় দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সেখানে একজনকে ছায়ায় রেখে সেবা করা হচ্ছে। তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন লোকটি রোজা রাখার কারণে কান্ত হয়ে পড়েছে। তখন তিনি বললেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। আরেক সফরে সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ রোজা রাখলেন, আবার কেউ কেউ রোজা রাখলেন না। 
 
এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে রোজাদারেরা কান্ত হয়ে পড়লেন। আর যারা রোজা রাখেননি, তারাই তাঁবু টাঙানো, বাহনগুলো সামলানো ইত্যাদি সব কাজ করলেন। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, বেরোজাদারেরা সব পুণ্য হাসিল করল। রমজান মাসেই সংঘটিত হয়েছে ইসলামের ইতিহাসের দু’টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ জিহাদ। দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে সংঘটিত হয় বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর একটি, যা বদরের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। উভয় যুদ্ধ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেন, আমরা রোজা রেখেই রওনা হয়েছিলাম। চলতে চলতে যখন শত্রু বাহিনীর একেবারে কাছে পৌঁছলাম, তখন আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে রোজা না রাখার আদেশ দিলেন। তিনি নিজেও রোজা রাখলেন না। আরেক জিহাদ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম বলেন, আমরা রোজা রেখেই রওনা হলাম। কয়েক দিনের সফর শেষে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অবসন্ন হয়ে পড়ল। এ খবর আল্লাহর রাসূলের কাছে গেলে তিনি রোজা ভেঙে ফেললেন এবং সবাইকে রোজা ভেঙে ফেলার আদেশ করলেন। এর পরও কেউ কেউ দিনটি শেষ করতে চাইলেন।
 
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এতে অত্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। মোটকথা সফরে রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে যদি কারো কষ্ট না হয়, তাহলে রোজা রাখা ভালো। আর যদি রোজা রাখার কারণে বেশি কষ্ট হয়, এমনকি সফরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে না রাখাই ভালো। পরে এই রোজাগুলো আদায় করতে হবে। কিন্তু রোজা না রাখার অনুমতি থাকলেও রমজান মাসের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এ জন্য প্রকাশ্যে পানাহার করা চলবে না। বরং তা আড়ালে সারতে হবে। ঠিক এই হুকুম কোনো কারণে রোজা নষ্ট হয়ে গেলেও। সে ক্ষেত্রেও দিনের বাকি সময়টুকু রোজাদারের মতোই কাটাতে হবে।

No comments :

Beingbd moved as sohoz-tech