একজন নারীর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সাথে জরায়ুর সমস্যা অন্যতম। জরায়ুতে নানাবিধ সমস্যা যেমন
মাসিকের সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা
মাসিকের সময় বেশি বেশি রক্তক্ষরণ
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় যাবত রক্তক্ষরণ
অনিয়মিত মাসিক
তলপেটে চাকার অস্তিত্ব অনুভব করা
সহবাসের সময় তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা
সাদা স্রাবের চিকিৎসা সত্ত্বেও ঘন ঘন দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব ও তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা
সহবাসের সময় রক্তক্ষরণ।
এই সব সমস্যার সাথে জরায়ুর যেসব রোগ সাধারণত দায়ী তা হলো-
জরায়ুতে টিউমার- ফাইব্রয়েড
এন্ডোমেট্রিওসিস
এডিনোমায়েসিস
জরায়ুতে ইনফেকশন- পেলভিক ইনফ্লোমটারী ডিজিস
ক্রনিক সারভিসাইটিস
জরায়ুর ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়
উল্লেখিত কারণগুলোর জন্য জরায়ুর অপারেশন কখনও কখনও অত্যাবশ্যকীয়। কিন্তু আমাদের দেশের মায়েরা ভীত হয়ে অপারেশন করাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। যদিও ভয় পাবার কোন কারণ নেই বললেই চলে।পেট না কেটে জরায়ুর অপারেশন দুভাবে করা যায়- প্রথমত : মাসিকের রাস্তা দিয়ে ও দ্বিতীয়ত:ল্যাপারোস্কোপি মেশিনের সাহায্যে।
মাসিকের রাস্তা দিয়ে জরায়ু কেটে আনা যাকে মেডিক্যাল টার্মে বলা হয় নন প্রলাপসড অথবা ননডিসেন্ট ভেজাইনাল হিস্টেরেক্ট্রোমি। অর্থাৎ জরায়ু মাসিকের রাস্তা দিয়ে নেমে না এসে জরায়ু ঠিক পজিশনে থাকলেও এই বিশেষ পদ্ধতিতে জরায়ুর অপারেশন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সুবিধা হলে রোগীকে পুরোপুরি অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়ে না। সিজারিয়ান অপারেশনের মতো স্পাইনাল বা ইপিডুরাল এনেস্থেসিয়ার মাধ্যমে করা যায়। এতে রোগীর জ্ঞান ফিরে না আসার ভয়ও থাকে না। কারণ রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। অপারেশনকালীন রক্তক্ষরণ কম হয়, ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা নেই, অপারেশন পরবর্তী ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়। হাসপাতালে মাত্র একদিন অবস্থান করা এবং খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া। অপারেশন পরবর্তী সময়ে ব্যথানাশক বড়ি না খেলেই চলে এবং দ্রুত স্বাভাবিক কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসা যায়। অপারেশনে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন পড়ে না।
পেট কেটে অপারেশন করালে যে অসুবিধাগুলো যেমন- কাটা জায়গায় ইনফেকশন হওয়া, রক্তক্ষরণ বেশি হওয়া, পরবর্তীতে হার্নিয়া হওয়া, তলপেটে ও অপারেশনের কাটাস্থানে ব্যথা অনুভব করা, বেশিদিন যাবত ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা, হাসপাতালে বেশিদিন অবস্থান করা এবং তদসঙ্গে বর্ধিত হাসপাতালের খরচ।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো পেট না কেটে জরায়ুর অপারেশন করলে নেই বললেই চলে। এই পদ্ধতিতে অপারেশন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও হচ্ছে। পেট না কেটে মাসিকের রাস্তা দিয়ে জরায়ুর অপারেশন করলে মাসিকের রাস্তায় কোনরকম কাটা ছেড়া থাকে না। সহবাসে কোনরকম সমস্যা হয় না। যদি প্রস্রাবের থলিতে ও পায়খানার রাস্তায় সমস্যা থাকে তাহলে এই সমস্যাগুলোর সমাধানও একই অপারেশনের মাধ্যমে একই সময়ে করা যায়।
কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাসিকের রাস্তা দিয়ে জরায়ুর অপারেশন করা সম্ভব হয় না। যেমন- পূর্ববর্তী অপারেশনের কারণে পেটের ভেতরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে ইনফেকশান অথবা বিশেষ রোগের কারণে। যেসব ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপি মেশিনের সাহায্যে সম্পন্ন করা যায়।
No comments :
Post a Comment