Blogger Tricks

দান করুন নীরবে


ধনাঢ্য বিত্তবান অর্থ-বৈভবে পূর্ণ অঢেল সম্পদের মালিকসহ সামার্থ্যবানদের দুস্থ-নিঃস্ব, গরিব, এতিম, মিসকিন, আশ্রয়হীন, পঙ্গু-বস্ত্রাভাবী, অন্ধ-গরিব অসহায়দের দুঃখ-কষ্ট মোচনে সাহায্য-সহযোগিতায় দান-খয়রাত এবং সেবা-যত্ন করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। দেখুন আল্লাহ পাক পরওয়ারদেগার স্বীয় কালাম পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তোমরা যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয় বস্তু দান-খয়রাত করবে সে পর্যন্ত কোনো সওয়াব-নেকি পাবে না। এছাড়া রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে আরও বলেছেন, যে বা যারা অঢেল ধন-সম্পদ-অর্থ সঞ্চয় করছে, তারা যেন ইহজগত-দুনিয়া ত্যাগ করার আগেই আল্লাহর নামে ‘ফিসাবিল্লিহ’ দান-খয়রাত করে যেতে থাকে। শুধু তাই নয়, আমাদের মহানবী হজরত রাসূলে মকবুল (সা.) তাঁর স্বীয় জীবনে অদ্বিতীয় দানবীর ছিলেন। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছে কেউ কিছু চাইলে তার কাছে যা থাকত তাই দান করে দিতেন। নিজে অসমর্থ হলে অপর কারোর কাছ থেকে ধার-কর্জ করে হলেও দান প্রার্থীকে দিয়ে দিতেন। শুধু তাই নয়, নিজের অতি প্রয়োজনকে তুচ্ছ মনে করে পরিবার-পরিজনকে অভুক্ত রেখে গরিব, এতিম, মিসকিন, অসহায়-অভাবী মানুষদের আহার করাতেন। আল্লাহর পেয়ারা নবী (সা.)-এর দান-খয়রাত ছিল বিশ্বব্যাপী মানবতার সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ আছে, একবার হজরত রাসূলে পাক (সা.) তার সাহাবিদের নিয়ে ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। পাহাড়টি দেখে হজরত রাসূলে মকবুল (সা.) বললেন, গরিব, দুঃখী, এতিম, অভাবী-অসহায় মানুষদের এই পাহাড়সম স্বর্ণ দান করে দিতাম। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব মোহাম্মদ (সা.)-এর এমনই ছিল দান-খয়রাতের আদর্শ। দান-খয়রাতের ফজিলত ও মরতবা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।
কোনো ব্যক্তি যদি নিতান্ত অভাবের তাড়নায় কারও কাছে চাইলে তাকে ধমক দেয়া হলে অন্তরে চোট লাগে এবং কষ্ট পেয়ে চোখ দিয়ে দরদরিয়ে পানি ঝরে এমন কথা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন ‘ওয়া আম্মাস সায়ীলা ফালা তানহার।’ অর্থাত্ : তুমি দান প্রার্থীকে ধমক দিও না। শুধু এ কথা বলেই আল্লাহ পাক ক্ষান্ত হন নাই তিনি তার স্বীয় কালামে আবারও ঘোষণা করেছেন, কাওলুম মারুফুল খাইরুম মিন ছাদা কাতি ইয়ার ফাহুয়া আজা। অর্থাত্ : কোনো কিছু দান প্রার্থীকে দান বা খয়রাত দেয়া হোক বা না হোক কোনো প্রকার কষ্টদায়ক কথা বলার চেয়ে একটি মিষ্টি মধুর কথা বলাই উত্তম। আল্লাহপাকের উক্ত বাণীতে স্পষ্টত বোঝা যায় অভাব-অভিযোগের তাড়নায় যারা এসেছে, তারাও আমাদের মতো রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। এদেরও ক্ষুধা রয়েছে, চাহিদা রয়েছে, এজন্য মানুষ মানুষের জন্য অন্তর কাঁদা উচিত। মাত্র কিছু কালের এই দুনিয়ায় অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে কী লাভ? নিজের জন্য সামান্য কিছু রেখে পরের তরে বিলিয়ে দিয়ে পরোকালীন জীবনে সুখ-শান্তি এবং নাজাতপ্রাপ্ত হন। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে আবারো এরশাদ করেছেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লাতুবতিলু ছাদাকাতিকুম। অর্থাত্ : হে ইমানদারগণ, তোমরা কোন সায়েল অর্থাত্ দান প্রহীতাকে কোনো রূপ খোঁটা বা কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-খয়রাত সাহায্য ও সেবাকে বরবাদ করে দিও না। এখানে একটু বলা প্রয়োজন, ডাতহাতে দান করলে বাম হাত ও যেন না জানে ইহা পবিত্র ইসলামেরই নির্দেশ।
দানশীলতা মানব চরিত্রের এক মহত্গুণ বা মানুষের হৃদয়কে কৃপণতার অভিশাপ থেকে মুক্ত ও সতেজ রাখে, এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আবারো বলেছেন, ওয়ামাইয়্যুকা, সুহ্হা নাফিসহী ফাউলা ইকা হুমুল মুফলিকুন। অর্থাত্ : যাদের মন দিল কৃপণতা বখেলী হতে মুক্ত তারাই হবে সত্যিকার সাফল্যমণ্ডিত।
উল্লেখ করা যেতে পারে দান-খয়রাতের বেলায় আমরা কেউ কেউ অনেক সময় নিজেদের ব্যবহৃত অকেজো-অযোগ্য পুরাতন জিনিসপত্র দান-খয়রাত করে নিজেদের দাতা হিসেবে নাম জাহিরের অপচেষ্টা চালাই। এতে নেকি বা সওয়াবপ্রাপ্ত হওয়া তো দূরের এতে দান-খয়রাত, সাহায্য সেবার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়। আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ, দুঃস্থ নিঃস্ব, গরিব এতিম, মিসিকন, বস্ত্রাভাবী, পঙ্গু, অন্ধ, আশ্রয়হীন, অভাব-অনটনগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে অকাতরে দান এবং সাহায্য-সহযোগিতা দান বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ যাবতীয় জনকল্যাণমূলক কাজে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ-সম্পদ দানের মনমানসিকতা গড়ে ওঠে। সেজন্য আমাদের সর্বোতোভাবে নিজেদের মানবতার সেবায় বাস্তবভিত্তিকভাবে আত্মনিয়োগ করতে পারি। মহান স্রষ্টা পরওয়ারদেগারের নিকট আমাদের এই ফরিয়াদ করি

Written By:মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার

No comments :

Beingbd moved as sohoz-tech