Blogger Tricks

মহিলাদের মান-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা লাভের অধিকার

কুরআন মজিদ থেকে আরো একটি মৌলিক অধিকারের কথা জানা যায়। এটি সম্পর্কে হাদিসেও বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। সেটি হলো, নারীদের মান-সম্ভ্রমের প্রতি সর্বাবস্থায় অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে। অর্থাৎ যুদ্ধ ক্ষেত্রেও যদি শত্রু কওমের নারীরা মুসলমান সৈনিকদের হস্তগত হয় তাহলে তাদের উপর হস্তক্ষেপ করা কোনো মুসলমান সৈনিকের জন্যে বৈধ নয়। কুরআনের নির্দেশ অনুসারে যে কোনো নারীর সাথে ব্যভিচার হারাম। সে নারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম। স্বজাতির হোক বা বিজাতির। বন্ধু দেশের হোক বা শত্রু দেশের-তাতে কিছু আসে যায় না। 

৪· অন্ন বস্ত্র ও চিকিৎসা পাবার অধিকার 

ক্ষুধার্তকে সর্বাবস্থায় খাবার দিতে হবে -এটি একটি মৌলিক নীতি। বস্ত্রহীনকে সর্বাবস্থায় বস্ত্র দিতে হবে। আহত এবং রুগ্ন ব্যক্তি সর্বাবস্থায় চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা লাভের আধিকারী। ভূখা-নাঙ্গা, আহত এবং রুগ্ন ব্যক্তি শত্রু হোক বা বন্ধু হোক তাতে কিছূ যায় আসে না, তাকে তার অধিকার প্রদান করতে হবে। কারণ এটি একটি সার্বজনীন ‘(টহরাবৎংধষ) অধিকার। শত্রুর সাথেও আমরা এ একই আচরণ করবো। শত্রু কওমের কোনো ব্যক্তি আমাদের হস্তগত হলে আমাদের অবশ্য কর্তব্য হবে তাকে ভূখা-নাঙ্গা না রাখা। আর আহত বা অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। (দ্রষ্টব্যঃ আল কুরআন সূরা ৫১: আয়াত ১৯ এবং সূরা ৭৬: আয়াত ৮) 

৫· ন্যায় আচরণ লাভের অধিকার 

কুরআন মজীদ একটি অলংঘণীয় নীতি প্রদান করেছে যে, মানুষের প্রতি ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেনঃ 
“কোনো সম্প্রদায়, গোষ্ঠী বা দলের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যোনো তাদের প্রতি বে-ইনসাফী করতে উৎসাহিত না করে। ইনসাফ করো এটি তাকওয়ার সর্বাধিক নিকটবর্তী।” (সুরা ৫ মায়েদাঃ আয়াত ৮) 

এ আয়াতটিতে ইসলাম একটি নীতি ঠিক করে দিয়েছে। তাহলো, মানুষের সাথে-সে ব্যক্তি হোক বা গোষ্ঠী, সর্বাবস্থায় ইনসাফ করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ নীতি মোটেই ঠিক নয় যে, আমরা বন্ধুদের সাথে ন্যায় ও ইনসাফের আচরণ করবো আর শত্রুর সাথে আচরণের ক্ষেত্রে এ নীতি পরিহার করবো। 

৬· ভালো কাজে সহযোগিতা এবং মন্দ কাজে অসহযোগিতা 

কুরআন আরো একটি মূলনীতি দিয়েছে। তা হলো, ভালো ও ন্যায়ের কাজে সবার সাথে সহযোগিতা করা এবং অন্যায় ও যুলুমের কাজে কারো সাথে সহযোগিতা না করা। ভাইও যদি মন্দ কাজ করে তাহলে আমরা তার সাথেও সহযোগিতা করবো না। আর কল্যাণের কাজ যদি শত্রুও করে তাহলে তাকেও সহযোগিতা করবো। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ 

“কল্যাণমূলক কাজে সবার সাথে সহযোগিতা করো এবং পাপ কাজে কারো সাথে সহযোগিতা করোনা” ( আল কুরআন, সূরা ৫: আয়াত ২) 

৭· সমতার অধিকার 

আরেকটি নীতি কুরআন মজীদ অত্যন্ত জোরালোভাবে বলে দিয়েছে। নীতিটি হলো, সমস্ত মানুষ সমান। কেউ মর্যাদা লাভ করলে তা করবে উত্তম নৈতিক চরিত্রের কারণে। এ ব্যাপারে কুরআন ঘোষণা করেছেঃ 


“হে মানবজাতি, আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে বিভক্ত করেছি - যাতে করে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। তবে তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশি আল্লাহভীরু সে-ই সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান।” (সুরা ৪৯ হুজুরাতঃ আয়াত ১৩) 

এ আয়াতে প্রথম যে কথাটি বলা হয়েছে তাহলো সমস্ত মানুষের জন্ম-উৎস এক। ভিন্ন ভিন্ন বংশধারা, ভিন্ন ভিন্ন ভাষা প্রকৃতপক্ষে মানব বিশ্বকে বিভক্ত করার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ হতে পারেনা। 

দ্বিতীয় যে বিষয়টি বলা হয়েছে তা হলো, ‘আমি মানব সমাজকে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি শুধু তাদের পারস্পরিক পরিচয়ের জন্য।’ অন্য কথায় একটি গোষ্ঠী, একটি জাতি এবং একটি গোত্রের অন্যদের উপর মর্যাদা ও গৌরবের এমন কিছু নেই যে, তা নিজেদের অধিকার বাড়িয়ে দেবে এবং অন্যদের কমিয়ে দেবে। 

আল্লাহ তা’য়ালা যে সব পার্থক্য করেছেন অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি দান করেছেন এবং পরস্পরের ভাষা আলাদা করেছেন, এসব পার্থক্য গর্ব প্রকাশ করার জন্যে নয়। বরং এ জন্যে করেছেন যাতে করে পরস্পরের মধ্যে পরিচয়ের পার্থক্য করা যায়। যদি সব মানুষ একই রকম হতো তাহলে তাদের মধ্যে পার্থক্য করা যেতো না। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এ বিভক্তি স্বাভাবিক। তবে এটা অন্যের অধিকার নস্যাত করা এবং বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে নয়। মর্যাদা ও গৌরবের ভিত্তি হলো উন্নত নৈতিক চরিত্র। এ বিষয়টি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেকভাবে বর্ণনা করেছেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি বলে দেনঃ 

“কোনো আরবের কোনো অনারবের উপর এবং কোনো অনারব কোনো আরবের উপর এবং কোনো সাদা বর্ণের কোনো কালো বর্ণের মানুষের উপর এবং কোনো কালো বর্ণের কোনো সাদা বর্ণের মানুষের উপর কোনো প্রকার মর্যাদা নেই একমাত্র তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতি ছাড়া। বংশের ভিত্তিতে কারো কোনো বিশেষ মর্যাদা নেই।” 

অর্থাৎ- মর্যাদার ভিত্তি শুধু উন্নত নৈতিক চরিত্র এবং আল্লাহভীতি। ব্যাপারটা এমন নয় যে, কোনো মানুষকে রৌপ্য, কোনো মানুষকে পাথর আবার কোনো মানুষকে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বরং সমস্ত মানুষ পরস্পর সমান। (১· যেসব কারণে কুরআন ফেরাউনের শাসন ব্যবস্থাকে ভ্রান্ত ব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেছে, তার একটি হলোঃ 
‘ফেরাউন পৃথিবীতে বিদ্রোহ করেছিল এবং দেশের অধিবাসীদের বিভক্ত করেছিল। সে তাদের একদলকে বঞ্চিত করতো।’ আল কুরআন সুরা ২৮ আল কাসাসঃ আয়াত-৪
ইসলাম কোনো সমাজের মানুষকে উচু ও নীচু বা শাসক ও শাসিত হিসেবে বিভক্ত করার পক্ষপাতি নয়।) 

৮· পাপ কাজ বর্জন করার অধিকার 

ইসলামের আরো একটি নীতি হলো, কোনো ব্যক্তিকে পাপের কাজ করতে নির্দেশ দেয়া যাবে না। কাউকে পাপ কার্যের নির্দেশ দেয়া হলে তা মেনে নেয়া তার জন্য বৈধ বা অপরিহার্য নয়।


কুরআনী আইনানুসারে কোনো নেতা বা অফিসার যদি অধীনস্তদের অবৈধ কর্মকান্ডের নির্দেশ দেয় অথবা কারো উপর যুলুম বা হস্তক্ষেপের নির্দেশ দেয় তাহলে এ ক্ষেত্রে অধীনস্ত বা কর্মচারীদের উক্ত নেতা বা অফিসারের আদেশ মানা বৈধ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ 

لا طَـاعَـةَ لِـمَـخـلُـوقٍ فِـى مَـعَـصِـيَّـةِ الـخَـالِـقِ. 

‘যে সব জিনিস বা বিষয়কে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা অবৈধ ও পাপের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন কাউকে তা করার জন্যে নির্দেশ দেয়ার অধিকার কারো নেই।’ 

পাপ কার্যের নির্দেশ দেয়া নির্দেশ দাতার জন্য যেমন বৈধ নয়, তেমনি সে হুকুম তামীল করাও কারো জন্যে বৈধ নয়। 

No comments :

Beingbd moved as sohoz-tech