ইচড়ে পাকা তো তাই আমি রোমান্স জিনিসটা অল্প বয়সেই হৃদয়ঙ্গম করে ফেলেছিলাম
সমঝদারের মত।ফলশ্রুতিতে ক্লাস ফাইভেই প্রেমে পড়লাম চশমা পড়া এক রাগী
বালিকার;যার মূল কাজ ছিল টিচারের কাছে বিচার দিয়ে আমাকে কান ধরে দাড় করিয়ে
রাখা!!ব্যাপক সাফল্যের সাথে সেই প্রথম ছ্যাকা খেয়েও আমার কচি মনটা দমে
যায়নি মোটেই।এরপরে আরো বেশকিছু ভিন্ন টাইপের ভিন্ন ভিন্ন ললনার প্রেমে
পড়লেও নিয়ম করে ছ্যাকা খাওয়াটা ছিল অভিন্ন।
এতগুলো দাগা খেয়ে খেয়ে আমার
হৃদয়টা হয়ে পড়লো বেশ স্পর্শকাতর।তাই যেকোন সিনেমায় একটু আবেগঘন দৃশ্য
দেখলেই আমি ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদি আর বিছানার চাদর দিয়ে চোখ মুছি!!
তো আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা শুনেছি তাতে আশিকী ২ দেখার পর চোখের পানিতে ঘর
ভেসে যাওয়ার নাকি সমূহ সম্ভাবনা। ফেসবুকে ছিঁচকাঁদুনে মেয়েরা (আমার চেয়েও
বেশি) হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে স্ট্যাটাস দিচ্ছে এই সিনেমা দেখে!তাই
সতর্কতামূলক প্রস্তুতিহিসেবে একটা এক্সট্রা বিছানার চাদর নিয়ে দেখতে
বসেছিলাম আশিকী ২।
পরিচালনা–মোহিত সুরি
স্টারকাস্ট – আদিত্য রায় কাপুর, শ্রদ্ধা কাপুর।
নায়ক মদ খান! উঁহু...। ইনি ‘খান’ সিরিজের নতুন নায়ক না; উনার সমস্যা হোল
তিনি শুধু মদ খান।নাম তার রাহুল। একজন রগচটা পপ সুপারস্টার।যার সম্বল
শুধুমাত্র বিষন্ন একজোড়া চোখ, আর অসম্ভব সুরেলা গলা।তাকে দর্শনেরজন্য
কনসার্টের দর্শকরা ঘন্টার পর ঘন্টা উদ্বেলিত হয়ে অপেক্ষা করতে পারে, তার
জন্য সারা দেশের তরুণ তরুণীরা পাগল আর সব মিডীয়ার আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু
তিনি। ভয়াবহ রকম নন ক্যারিশমাটিক একটি চরিত্র;যার ভেতর মদ খাওয়াই
সুপারস্টারসুলভ একমাত্র গুণ!রাহুল সাহেব স্টেজে ওঠার আগে, ওপেন স্টেজে,
স্টেজ থেকে নেমে, গাড়ীতে ওঠার আগে,গাড়ী চালাতে, গাড়ী থেকে নেমে,বারে,
রাস্তায়, হোটেলে,বাসায় – সব জায়গায় সারাক্ষন মদ খান। পুরো সিনেমায় তাকে মদ
আর একটি চুমু ছাড়া আর কিছু খেতে দেখা যায়নি।
তখন সময় খারাপ। ফর্ম পড়তির
দিকে, গানের বাজারে মন্দা, জনপ্রিয়তায় ভাটা। নায়কের কোন খেয়াল নেই।
উড়াধুরা পুরা !! একদিন বাধা দেয় বিবেক। নিজের বিবেক নয়, বন্ধু কাম
ম্যানেজার বিবেক! যতটা সময় পর্দায় নিজেকে দেখানোর সুযোগ পেয়েছেন, তার
পুরোটা সময় যাত্রাপালার বিবেকের মত কঠিন ডায়লগ দিয়ে গেছেন কোন পরিস্থিতিতেই
মুখোভঙ্গি একবিন্দু না বদলিয়ে !! তীব্র বাধার মুখে নায়ক; নায়কোচিত ভাবে
ডিম আগে;না মুরগী আগে–প্যারাডক্সের মত কঠিন এক বাণী দিয়ে বিবেকের থোতা মুখ
ভোতা করে দিলেন !! “আমি মরার নেশায় পান করিনা, পান করার নেশায় মরি!!” আহা
!! কেয়া বাত !! মারহাবা !! মারহাবা !!
রাতের বেলা সানগ্লাস লাগিয়ে গাড়ী
চালাচ্ছেন সুপারস্টার। একহাতে স্টিয়ারিং, আরেকহাতে মদের বোতল। হঠাত
সদাইপাতি সহ নায়িকার এন্ট্রি হোল একেবারে গাড়ীর সামনে!! মাতাল কে বোঝা
গেলনা !! নায়ক? নায়িকা? নাকি গাড়ী? কোনমতে নায়িকা বেঁচে গেলেও গাড়ীর
ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে রইল নায়িকার অসহায় সদাই – আলু, পটল আর
কাঁচামরিচ গুলো। অল্পের জন্য জানে বেঁচে যাওয়ার পরবর্তী রিএকশনে নায়িকা
সদাই কুড়াতে লাগলেন, আর নায়ক কে দেখা মাত্রই খ্যাক করে উঠলেন! (বংশের দোষ
!! ভিলেন কন্যা বলে কথা!!)......
থাক থাক বাকিটুকু সবাই
জানে...জানে না শুধু এটা যে ছবি দেখতে চাদর নিয়ে বসাটা আমার পুরাপুরি
ব্যর্থ হয়েছিল...কান্নাতো আসেই নি বরং ছবির নানা অংশ ব্যপক হাসির উদ্রেগ
করেছে সে যাই হোক ছবির গানগুলো খুব ভাললেগেছিল....
No comments :
Post a Comment