Blogger Tricks

মেয়েদের কিছু ফ্যাশান – পোশাক ও অঙ্গসজ্জা, ইসলামের আলোকে

১। নেইলপলিশঃ অনেকে মনে করেন নেইলপলিশ হারাম। এটা ভুল ধারণা। নেইলপলিশ পণ্যটা হারাম বা নিষিদ্ধ নয়। একজন মহিলা নখে নেইলপলিশ দেওয়া অবস্থায় নামাজ – তেলাওয়াত সবই করতে পারবেন, যদি এতে হারাম উপাদান না থাকে। কিন্তু নেইলপলিশ দুটো ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রথমত, আপনার নখে যদি নেইলপলিশের আস্তরণ থাকে তবে তা ভেদ করে পানিপ্রবেশ করবে না, ওজু সম্পন্ন হবে না। সে ক্ষেত্রে আপনি নামাজ– তেলাওয়াত কিছুই করতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, নেইলপলিশে রাঙ্গানো নখ আপনার বোরখার বাইরে থাকবে, যা কোনও পুরুষকে আকর্ষণ করতে পারে। যে কারনে নেইলপলিশ পরে বাইরে যাওয়া যাবে না।

২। ভুরু প্লাকঃ রাসুলুল্লাহ (সা)বলেন, আল্লাহ ঐ সব নারীদের অভিশাপদিয়েছেন যারা তাদের ভুরুর পরিবর্তন সাধন করে এবং অন্যদের করতে বলে। (সাহিহ বোখারিও মুসলিম)। যে সমস্ত লোম যেগুলো ফেলে দেয়া নিষিদ্ধ যার মধ্যে ভ্রূ রয়েছে। চোখের ভ্রূ ফেলে দেয়ার এই কাজটিকে বলা হয় আল-নামাস।
উল্লিখিত মতের স্বপক্ষে দলিল হলো ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবন মাস‘ঊদ (রা)থেকে বর্ণিত হাদিসটি যাতে তিনি বলেন: আমি আল্লাহ্‌র রাসূল(সা)কেবলতেশুনেছি: “আল্লাহ্‌ অভিসম্পাত করেছেন ঐ নারীর ওপর যেশরীরেউল্কি আঁকে ও যে আঁকিয়ে নেয়; যে ভ্রু তুলে ফেলে (আল-নামিসাহ্‌) এবং যে তুলেফেলায় (আল-মুতানাম্মিসাহ্‌), এবংসে যে সৌন্দর্যেরজন্য আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে তার দাঁত চিকনকরে।” [আল-বুখারি (৫৯৩১); মুসলিম (২১২৫)]

আন-নাওয়াবী (রহঃ) বলেছেন: নামাসিয়াহ্‌ হলো ঐ নারী যে মুখেরলোম তুলে ফেলে এবং মুতানাম্মিসাহ্‌হলো ঐ নারীযে অন্য কাউকে দিয়ে এমনটি করিয়ে নেয়। এই ধরনের কাজ হারাম। তবে কোনো নারীর যদি দাড়ি বা গোঁফ গজায় তাহলে সেক্ষেত্রে ঐগুলো তুলে ফেলা হারাম নয়। বরং আমাদের দৃষ্টিতে সেটা মুস্তাহাব (উৎসাহিত)। [শারহ্‌ আল-নাওয়াবী লি সহীহ্‌ মুসলিম, ১৪/১০৬]

৩। হেয়ার রিমুভিং: হাত-পা, গাল বাকপালের লোম বা চুল যেগুলো ফেলে দিতে হবে নাকি যেমন আছে তেমনি রেখে দিতে হবে সে ব্যাপারে শারিয়াহ্‌ কোনো মন্তব্য করেনি। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেছেন যে, এগুলো ফেলে দেয়ার অনুমতি নেই। কারণ এগুলো ফেলে দেয়ার অর্থ হলো আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা। যেমনটি আল্লাহ্‌ বলেন যে, শয়তান বলেছিল: “ ‘এবং তাদেরকে আল্লাহ্‌র সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তনকরতে আদেশ দেবো।’ ”[আন-নিসা’ ৪:১১৯]
আবার কেউ বলেছেন যে, এগুলো ঐ সব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর ব্যাপারে কোনোকিছুবলা নেই। তাই এগুলোর ব্যাপারে হুকুম হলো এগুলো ফেলে দেয়া অনুমোদিত। এগুলো ফেলেও দেয়া যাবে অথবা যেমনআছে তেমন রেখে দেয়া যাবে। কারণ কোরআন এবং সুন্নাহ্‌তে যা কিছুর উল্লেখ নেই তা অনুমোদিত।

ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌- তে রয়েছে: কোনো নারী যদি ঠোঁটের উপরের, উরুর, পায়ের গোড়ালিরউপরের অংশের (হাঁটুর নিচে) এবং বাহুর লোম ফেলে দেয় তাহলে তার কোনো পাপ হবেনা। এগুলো তুলে ফেলা তানাম্মুস (প্লাকিং) এর মধ্যে পড়ে না যা নিষিদ্ধ। (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌, ৫/১৯৪, ১৯৫)।

৪। হেয়ার ডাইয়িং: হেয়ার কালার ব্যবহার করা জায়েয যদি ঐসবের তৈরির উপাদানে কোন হারাম বস্তু না থাকে। পুরুষ – মহিলা সকলেই কালো ছাড়া চুলে অন্য যেকোনো রঙ ব্যবহার করতে পারেন। তবে কেউ কালো রঙ করতে পারবেন না, কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন: সাদাচুলের রঙ পরিবর্তন কর, কালো (রঙ করা) বাদ দিয়ে। [মুসলিম] রাসুল (সঃ) আরও বলেছেন, " শেষ জামানায় একদল লোক কবুতরের বুকের রঙের ন্যায় কাল খেজাবব্যবহার করবে। আর এ কারনেই তারা জান্নাতের কোন সুগন্ধি পাবে না।" [আবু দাউদ ৪/৪১৯]

নবী করিম (সঃ) পাকা চুলে খেজাব লাগাতে বলেছিলেন মেহেদী বা এধরনের কোন জিনিসদ্বারা, যাতে হলুদ , লাল ইত্যাদি মৌলিক রঙ ফুটেওঠে। জাবির বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত যে, আবু কুহাফা (রাঃ)কে (যিনি আবু বকর আস-সিদ্দিক রাঃ এরপিতা ছিলেন) মক্কা বিজয়ের দিন আনা হয়। তখন তাঁর মাথার চুলও দাঁড়ি ‘সাগামাহ’র (যে বৃক্ষের ফুলও ফল সাদা) মত শ্বেতবর্ণের ছিল। রসূলুল্লাহ (সাঃ) বল্লেন: "একে কোন রঙ দিয়ে বদলে দাও কিন্ত কালোরঙ এড়িয়ে চল”। [মুসলিম ৩/১৬৬৩]
৫। চুল কাটা ও পরচুলা ব্যবহার: নারীর চুল কাটা নিয়ে কোন নিষিদ্ধতার কথা আমার জানা নেই। তবে সম্পূর্ণ মস্তক মুন্ডন করা নিষিদ্ধ। কোন শারিরীক অসুস্হতা বা অন্য কোন সমস্যার ক্ষেত্র ছাড়া তা জায়েয নয়। চুল দৈর্ঘ্যে ছোটকরা যেতে পারে। এতে কোন দোষআছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু তা কাফিরদের অনুকরণে করা যাবে না। (শেখ বিন বায (রহঃ), ফতোয়া আল-মার্‌আহ)।

পরচুলা ব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ এবং তা কারো চুলের উপর অতিরিক্ত চুল সংযোগ করার মত। প্রকৃতঅর্থে তা হুবহু না হলেও, এতে নারীর চুলকে সত্যিকার চুলের চেয়ে দীর্ঘ দেখায় এবং তখন তা হয় চুল সংযোজনের অনুরূপ। যে চুল সংযোজন করে এবং যে তা করবার জন্য অনুরোধকরে তাদের উভয়কেই রসূলুল্লাহ (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন । স্বামীর অনুমতি থাক বা না থাক. মাথায় পরচুলা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ । (শেখ মোহাম্মদ সালেহ আল উসাইমীন (রহঃ))
কৃত্রিম নখ, নকল পাপড়ি, এবং রঙ্গিন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করাকেও বিভিন্ন ফতোয়ায় নিষিদ্ধ বলা হয়েছে, তবে এ ব্যাপারে মতো বিরোধ আছে।
_____________________________________________________________
সবকিছুর আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

No comments :

Beingbd moved as sohoz-tech